
সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল: প্রত্যাশী সিমস্ প্রকল্পের উদ্যোগে বৃহষ্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে নিরাপদ অভিবাসন ইস্যুতে চট্টগ্রাম জেলায় কর্মরত সরকারি ও বেসরকারি অংশীজনদের সমন্বয়ে “বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ও স্থানীয় সালিশ ব্যবস্থায় গ্রিভেন্স ম্যানেজমেন্ট কমিটি (জিএমসি)-এর ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালা” অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যাশীর উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রাশিদা খানমের সভাপতিত্বে ও সিমস্ প্রকল্প ব্যবস্থাপক বশির আহম্মদ মনি (সূফি মনি)’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ (সাইবার ট্রাইব্যুনাল) কাজী মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সরকার হাসান শাহরিয়ার, যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ (ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল) রূপন কুমার দাশ এবং মেট্রোপলিটনের সহকারি পুলিশ কমিশনার কেশব চক্রবর্তী।
এতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন হেলভেটাস বাংলাদেশ-এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর তাওহিদা কবির। সভায় বিশেষ আলোচক ছিলেন হেলভেটাস বাংলাদেশ-এর এডভোকেসী এক্সপার্ট শামায়লা মাহবুব, বিকেটিটিসি’র অধ্যক্ষ প্রকৌশলী পলাশ কুমার বড়ুয়া, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র চাকমা, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সহকারি মহা-ব্যবস্থাপক হাসান মোহাম্মদ সাহারিয়া, চট্টগ্রাম মহিলা টিটিসি’র অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আশরিফা তানজীম, চট্টগ্রাম ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহকারি পরিচালক আতিকুল আলম প্রমুখ।
প্রধান অতিথি বলেন- প্রবাসী কর্মীদের হয়রানি রোধে স্থানীয়ভাবে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে জিএমসির ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে এ ব্যবস্থা অনেক পূরণো এবং কার্যকর। নিয়ম মেনে স্থানীয়ভাবে সমঝোতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করণে কোন আইনের সাথে সাংঘর্ষিকতা নাই, এটি আদালতের বিকল্প নয় বরং আদালতের সহায়ক একটি প্রক্রিয়া। তবে মেডিয়েটরদের আন্তরিকতা, নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে পক্ষগণের মধ্যে সমঝোতা আবশ্যক।
বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, চট্টগ্রাম সরকার হাসান শাহরিয়ার তাঁর বক্তব্যে বলেন-বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩ অনুযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার নিশ্চিতে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। শ্রম অভিবাসী, বিদেশফেরত ব্যক্তি অথবা প্রবাসী পরিবার প্রতারণার শিকার হলে পেনাল কোডে মামলা না করে সরাসরি এই আইনের আওতায় অভিযোগ ও নিষ্পতিকরণ অধিক কার্যকর।
বিশেষ অতিথি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল) রূপন কুমার দাশ বলেন-দেশে উচ্চ আদালতে মামলার চাপ থাকায় স্থানীয় ভাবে নিষ্পত্তিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রবাসীদের অভিযোগগুলো লিগ্যাল এইডে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয়। তিনি আরো বলেন-দেশেএ ধরণের সমন্বয় সভা যত বেশি আয়োজন করা হবে, অভিবাসী কর্মীদের সেবা, অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা তত বেশি সহজ হবে।
কর্মশালার সভাপতি ও প্রত্যাশী উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রাশিদা খানম বলেন-সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। যৌথভাবে কাজ করলে অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, কার্যকর ও ঝুঁকিমুক্ত হবে। তিনি আরও বলেন যে, তথ্যপ্রদান, প্রাসঙ্গিক পরামর্শ, আইনগত সহায়তা ও কমিউনিটি পর্যায়ের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদেশগমন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়। এতে করে প্রতারণা, অতিরিক্ত ব্যয় এবং কর্মক্ষেত্রের শোষণ কমানোর সুযোগ তৈরি হয়।
সভায় বক্তাগণ দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের দিকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখায় প্রত্যাশী সিমস্ প্রকল্পের ভূয়শী প্রশংসা করেন। জেনে বুঝে ও দক্ষ হয়ে বিদেশ যাওয়ার কোন বিকল্প নাই। তিনি নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য প্রত্যাশীকে ধন্যবাদ জানান। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে চট্টগ্রামে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও), আইনজীবি, সাংবাদিক, জিএমসি এবং অভিবাসীকর্মী প্রতিনিধিবৃন্দ সহ অপরাপর সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থেকে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
Leave a Reply