মো মুজিব উল্ল্যাহ্ তুষার: আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, বাঙালির প্রাণের উৎসব 'নবান্ন'। এই দিনটি একই সাথে আমাদের 'জাতীয় কৃষি দিবস'। হাজার বছরের গৌরবময় কৃষিভিত্তিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০০৮ সালে নবান্ন উৎসবের এই দিনটিকেই 'জাতীয় কৃষি দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
একসময় কৃষি ছিল আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান উপায়। কিন্তু যুগ বদলেছে। আজ ‘আগে কৃষি ছিল বেঁচে থাকার উপায়, এখন কৃষি উন্নয়নের হাতিয়ার।’
কৃষক জাতির অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ঔপনিবেশিক আমলে নীলকর ও জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকের বিদ্রোহ, জমিদারি ব্যবস্থার শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, কিংবা ফজলুল হকের “লাঙল যার জমি তার” আন্দোলন ও মাওলানা ভাসানীর কৃষক-সংগ্রাম আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। স্বাধীনতার পরও কৃষক রয়ে গেছে প্রান্তিক ও বঞ্চিত। আধুনিক কৃষির নামে বহুজাতিক কোম্পানি আজ কৃষকের জমি, বীজ, সার, কিটনাশক ও বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কৃষক পরিণত হয়েছে ভাড়াটে শ্রমিকে, অথচ কৃষকই এই দেশের খাদ্য উৎপাদক ও অর্থনীতির চালিকাশক্তি।
কৃষি সার্বভৌমত্ব : মাটি, বীজ,পানি ও কৃষির সব সম্পদের উপর কৃষকের পূর্ণ অধিকার।অর্থনৈতিক ন্যায় কৃষকের উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য ও জীবনমান উন্নয়ন।রাজনৈতিক ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব, কৃষককে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তগ্রহণে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় নিয়ে আসা।
পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই কৃষি: কৃষিকে পরিবেশবান্ধব, জৈব ও টেকসই পথে রূপান্তর। সমাজে মর্যাদা ও স্বীকৃতি : কৃষককে জাতীয় নায়ক ও উন্নয়নের মূল শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি।
বাংলাদেশের কৃষি এখন আর শুধু কায়িক পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল নয়। আমরা প্রবেশ করেছি জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুগে। আমাদের কৃষির ভবিষ্যৎ এখন প্রযুক্তির হাত ধরেই এগিয়ে যাবে।
আগামী দিনের কৃষি প্রযুক্তি: বিশ্ব কৃষিবাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের যে প্রযুক্তিগুলোকে আলিঙ্গন করতে হবে, তার মধ্যে অন্যতম:
প্রিসিশন ফার্মিং (Precision Farming): ★ফসলের চাহিদা অনুযায়ী নিখুঁতভাবে সার, পানি ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ।
★স্মার্ট গ্রিনহাউস: নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে উচ্চমূল্যের ফসল চাষ।
★ড্রোন টেকনোলজি: বীজ বপন, সার-কীটনাশক ছিটানো এবং পর্যবেক্ষণ।
★বায়োইনফরমেটিক্স: উন্নত জাত উদ্ভাবন ও রোগবালাই নির্ণয়।
★কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI): তথ্য বিশ্লেষণ করে কৃষিখাতে সঠিক নীতিনির্ধারণ।
এই প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি বিপ্লবকে যত দ্রুত আমরা ছড়িয়ে দিতে পারবো, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের কৃষি ততটাই সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
জাতীয় কৃষি দিবসে দেশের সকল কৃষক, কৃষিবিদ, গবেষক এবং এই খাতের সাথে জড়িত সকলকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।
লেখক: সাংবাদিক, সংগঠক ও পরিবেশ আন্দোলন কর্মী।