
ডা. এমরান উর রশিদ চৌধুরী: বিশ্বব্যাপি ডায়াবেটিস এখন এক নীরব মহামারীর আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশও এই ভয়াবহতা থেকে সুরক্ষিত নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের হার সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন-এর ২০২৪ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যাদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ জানেনই না যে তারা এই রোগে ভুগছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৬০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে, যার একটি বড় অংশই হবে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলো থেকে, যে তালিকার শীর্ষে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা, মানসিক চাপ এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাবই এই রোগের মূল কারণ। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে’র তথ্যে দেখা যায়, শহরাঞ্চলের প্রায় ২৫ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ রক্তে হাই-সুগারের সমস্যায় ভুগছেন।
ডায়াবেটিস কেবল একটি রোগ নয়, বরং এটি শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরই ক্ষতি করে। নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিসের কারণে হৃদরোগ, কিডনি বিকলতা, দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া, স্নায়ুজনিত সমস্যা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীরই কোন না কোন পর্যায়ে হৃদরোগের জটিলতা তৈরি হয়।
তবে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত হাঁটা, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, পরিমিত খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি হতে পারে প্রতিরোধের মূল কৌশল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং বছরে অন্তত একবার রক্তে সুগার পরীক্ষা করলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দৈনিক ৭,০০০ স্টেপ হাঁটেন, তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৪০% পর্যন্ত কমে যায়। কার্বোহাইড্রেট ও অতিরিক্ত চিনি পরিহার করে শাকসবজি, ডাল, ফাইবারযুক্ত খাবার ও প্রচুর পানি পান করলে ইনসুলিন কার্যকারিতা উন্নত হয়।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ডায়াবেটিস ও হরমোনজনিত রোগের চিকিৎসায় অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম। এখানে আছে অত্যাধুনিক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, অভিজ্ঞ চিকিৎসক, উন্নত ল্যাবরেটরি এবং রোগী-কেন্দ্রিক সেবা ব্যবস্থা। এখানে ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষ পুষ্টি পরামর্শ, ইনসুলিন থেরাপি, লাইফস্টাইল-ভিত্তিক নির্দেশনা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ প্রোগ্রাম দেওয়া হয়। এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন ও হেলথ টক আয়োজনের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে মানুষ প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।
ডায়াবেটিস সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য না হলেও সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সচেতন চলাফেরা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এই নীরব মহামারী প্রতিরোধ করা সম্ভব। “প্রথমে জানুন, তারপর নিয়ন্ত্রণ করুন” এই বার্তাটি যদি প্রতিটি পরিবারে পৌঁছে দেওয়া যায়, তবে বাংলাদেশ একদিন ডায়াবেটিসমুক্ত সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
ডা. এমরান উর রশিদ চৌধুরী
এমবিবিএস, এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম)
এটেন্ডিং কনসালটেন্ট, এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড ডায়াবেটোলজি
এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম
Leave a Reply