মাওলানা শেখ তারেক হাসান মাহদী
মানুষের কল্যাণে দান-সদকাহর ব্যাপারে আল কোরআন বিভিন্নভাবে নির্দেশ দিয়েছে। বলেছে উৎসাহের কথা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওহে তোমরা যারা ইমান এনেছ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয় তারাই তো মহাক্ষতির মুখোমুখি হয়। আমি তোমাদের যেসব রিজিক ও সম্পদ দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। যদি তা না কর তাহলে মৃত্যুর সময় তোমাকে বলতে হবে, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছু মুহূর্ত সময় দাওনি কেন? তাহলে আমি আমার সব সম্পদ তোমার পথে মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ (সুরা মুনাফিকুন আয়াত ৯-১০) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবন ধ্বংসের মুখোমুখি কোর না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা আয়াত ১৯৫)।
দানের প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি দান গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরও ভালো। আল্লাহ তোমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানেন।’ (সুরা বাকারা আয়াত ২৭১) ‘যারা নিজের ধনসম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং মানুষকে কষ্টও দেয় না তাদেরই জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার।’ (সুরা বাকারা আয়াত ২৬২) আল্লাহ আরও বলেন, ‘শয়তান তোমাদের অভাব-অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়, আর আল্লাহ দান করার বিনিময়ে ক্ষমা ও সম্পদ বৃদ্ধির ওয়াদা করেন। বস্তুত আল্লাহ সমৃদ্ধিশালী, সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা আয়াত ২৬৮)। দান-সদকার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবী (সা.) বলেছেন, ‘একটি খেজুর দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।’ (বুখারি, মুসলিম) হজরত উকবা বিন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান-সদকা কবরের আজাব বন্ধ করে দিতে পারে। আর কিয়ামতের দিন বান্দাহকে আরশের ছায়ার নিচে জায়গা করে দেয়।’ (তাবারানি, বায়হাকি) হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘জীবিত থাকা অবস্থায় ১ টাকা দান করা মৃত্যুর পর ১ হাজার টাকা দান করার চেয়ে বেশি কার্যকর।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘দান সম্পদ কমায় না, দান দ্বারা আল্লাহ বান্দার সম্মান বৃদ্ধি করেন। কেউ আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয় প্রকাশ করলে আল্লাহ তাকে বড় করেন।’ (মুসলিম) হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘এমন কোনো দিন যায় না যে দিন দুজন ফেরেশতা পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে না। তাদের একজন দানশীল ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকে এবং বলে, হে আল্লাহ! তুমি দানশীল ব্যক্তিকে উত্তম বিনিময় দাও। দ্বিতীয় ফেরেশতা কৃপণের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বদ দোয়া করে বলে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস ও বরবাদ কর।’ (বুখারি, মুসলিম)।
লেখক : ইসলামবিষয়ক লেখক।
Leave a Reply